বেলজিয়ামে যৌনকর্মীদের জন্য একটি নতুন আইন পাশ হয়েছে, যা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যৌনকর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং অবসরভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করছে। এই আইনের মাধ্যমে যৌনকর্মীরা এখন আনুষ্ঠানিক নিয়োগ চুক্তি, স্বাস্থ্যবিমা, অবসরভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন করতে পারবেন, যা তাদের কাজকে অন্যান্য চাকরির মতোই গণ্য করবে।
২০২২ সালে বেলজিয়ামে যৌন পেশাকে বৈধতা দেওয়া হয়, তবে এই আইনই প্রথম যৌনকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তির আওতায় আনার পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের অন্য কিছু দেশে, যেমন জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, এবং গ্রিসে যৌনবৃত্তি বৈধ হলেও, বেলজিয়ামে যৌনকর্মীদের জন্য এ ধরনের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ঘটনা একেবারেই নতুন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক এরিন কিলব্রিডে বলেন, "এটা একটি আমূল পরিবর্তন এবং বিশ্বে এখন পর্যন্ত আমার দেখা সেরা পদক্ষেপ। প্রতিটি দেশকে আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে রাজি করাতে হবে।"
তবে কিছু সংগঠন এবং যৌনকর্মীরা এই আইনের প্রভাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বেসরকারি সংস্থা ‘ইসালা’র স্বেচ্ছাসেবক জুলিয়া ক্রুমি রে বলেন, "এটা বিপজ্জনক, কারণ এটি এমন একটি পেশাকে স্বাভাবিক মর্যাদা দিচ্ছে, যার মূলেই ছিল নৃশংসতা।" তবে, নতুন আইনে যৌনকর্মী ও গ্রাহকদের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করাকেও বৈধতা দেওয়া হয়েছে, যা জীবনকে কিছুটা সহজ করবে বলে আশা করছেন তারা।
বেলজিয়ামের এক যৌনকর্মী সোফিয়া তার জীবনের সংগ্রামের কথা শেয়ার করে বলেন, "আমি যখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম, তখনো আমাকে কাজ করতে হয়েছিল। সন্তানের জন্ম দেওয়ার এক সপ্তাহ আগেও আমাকে গ্রাহকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে হয়েছিল।" তিনি আরও জানান, তার পাঁচটি সন্তান রয়েছে এবং অস্ত্রোপচারের পর তাকে ছয় সপ্তাহ বিশ্রামের পরামর্শ দেওয়া হলেও, অর্থের চাহিদায় তাকে দ্রুত কাজে ফিরতে হয়েছিল।
সোফিয়া নতুন আইনের ব্যাপারে বলেন, "এটি আমাদের জন্য মানুষ হিসাবে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার সুযোগ।"
এই নতুন আইন বেলজিয়ামে যৌনকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তাদের জন্য কিছু মৌলিক কর্মসংস্থানের সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।